রাশেদুল ইসলাম
মানুষের কথা কেন বুঝতে পারছেনা নেতারা। আমি পুরো বাংলাদেশের কথা বলছিনা। আমি আমার আশেপাশের কথা বলছি। আমি আমার শহরের কথা বলছি,আমার গ্রামের কথা বলছি। সারা বাংলাদশে হয়তো এই রকম নয়। সারা দেশের নেতারা হয়তো এই রকম নয়। আমি আমার কক্সবাজার শহর নিয়ে বলছি, কক্সবাজার জেলা নিয়ে বলছি।
কাগজে পত্রে সবচেয়ে বেশি উন্নয়ন হচ্ছে নাকি কক্সবাজার জেলায়। সাধারণ মানুষ তার কোন সুফল এখনও দেখতে পাচ্ছেনা। একজন আওয়ামীলীগের কর্মী হিসেবে আওয়ামীলীগের উন্নয়ন ও সাফল্যের কথা প্রচার করতে পারলে ভালো লাগতো। কিন্তু সেই সুযোগ কোথায়, কিছু আমলা ও নেতাদের স্বেচ্ছাচারিতা, দূর্নীতি ও অযোগ্যতার কারণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সমস্ত উন্নয়ন প্রচেষ্টা আজ প্রশ্নের সম্মুখীন। সাধারণ মানুষের কথা কি বলবো, একজন আওয়ামীলীগ কর্মী ও সংবাদ কর্মী হয়ে আমারও দেখা’র সৌভাগ্য হচ্ছেনা।
কক্সবাজার জেলায় কোথাও ভালো রাস্তা আছে কিনা আমি জানিনা। চলাচলের উপযুক্ত তো নয়, হাঁটার উপযুক্তও নয়।
পর্যটন শহর হিসাবে জাতীয় আন্তর্জাতিক ভাবে কক্সবাজারকে উপস্থাপন করা হয়। পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের মালিক হিসেবে গর্ব করি। সেই সমুদ্র পাড়টি বিশ্রী ভাবে দখল করে ফেলেছে আমাদের গৌরব আমলা আর কক্সবাজারের জাতীয় নেতারা। কিটকট থেকে শুরু করে ঝুপড়ি দোকান সবই দেশের শীর্ষ আমলা আর নেতাদের দখলে নামে বেনামে।
পর্যটন শহরে যত্র তত্র ময়লার স্তুপ, কখন পরিস্কার হয় কেউ জানেনা। নালা নর্দমা গুলো যে ঠিক সময়ে পরিস্কার করতে হয় কতৃপক্ষ জানে বলে মনে হয়না। তাইতো অধিকাংশ সময় নালার পানি রাস্তার উপর দিয়েই চলাচল করতে দেখা যায়।
রাস্তা গুলোর মা-বাপ কেউ আছে কিনা জানিনা। বড়ো বড়ো নেতার হঠাৎ আগমন ঘটলে, নেতাদের যাত্রাপত্র টুকু রাতারাতি একটু প্রলেপ দেওয়া হয় মাত্র। তারপর যেই লাউ সেই কদু। তবু স্বপ্ন দেখি, মাঝে মাঝে পত্রিকায় ছবিও দেখতে পাই কক্সবাজার সিংগাপুর হয়ে যাচ্ছে, পাঁচ ছয় লেনের রাস্তা ঘাট আরও কতো কি?
মানুষের হাহাকার দায়িত্বশীলদের কানে পৌঁছায় না।আমলারা নেতারা সবাই নিজেদের উন্নয়নে ব্যস্ত। এলএ অফিসে টাকা নিতে মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই। টাকা ছাড়া কোন অফিসে কাজ হয় না, টাকা দিয়ে করতে পারলেই মানুষ বাঁচে। কক্সবাজার জেলাটা যেন টাকার খনি। যাদের একসময় জীবন ধারণে কষ্ট হয়েছে, মনোনয়ন ফরম জমা দিতে ধার কর্জ করতে হয়েছে, তারা সবাই এখন কোটিপতি, শতহাজার কোটিপতি।
কোরবানির ঈদে বাজারে সেরা গরু ক্রয় করে নিজের আর গরুর ছবি ছাপায়। একশো পাঁচশ গরু জবাই করে মেজবান খাওয়ায়। লুটের টাকায় দানবীর সাজার চেষ্টা করে। আমলাদের অবস্থাও একই কক্সবাজার যেন লুটের মাল, দুই বৎসরে শতকোটি টাকা করে নিয়ে যেতে চায় প্রায় সবাই। পুলিশের কিছু ওসি আছে গুরে ফিরে এ থানা ও থানা করে কক্সবাজারেই থেকে যায় বছরের পর বছর।
ইয়াবা,দখল- বেদখল ডাকাতি থেকে শুরু করে এমন কোন কাজ নেই যা আমাদের নেতাদের আশ্রয় প্রশ্রয় ছাড়া হচ্ছে।
শুদ্ধি অভিযানের কোন রেশ নেই এই জেলায়। কাউকে শুদ্ধ করতে পারেনি শুদ্ধি অভিযান। এখনো বিএনপি জামাত আওয়ামী লীগ হচ্ছে কক্সবাজারে।কমিউনিটি পুলিশের নিয়োগ পাচ্ছে চিহ্নিত অপরাধীরা। দূর্নীতিবাজ বিতর্কিতদের দেওয়া হচ্ছে আওয়ামিলীগ পূনর্গঠনের দায়িত্ব। পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত, মাতামুহুরি, বাকখালী,চিংড়ি মহাল,জল মহাল,বালু মহাল কিছুই রক্ষা পাচ্ছে না তাদের কাছ থেকে। শহরের চেয়ে গ্রামের অবস্থা আরো ভয়ংকর। জেলার নেতাদের চেয়ে কিছু কিছু উপজেলার নেতাদের কর্মকান্ড আরো মারাত্মক। অনেক ক্ষেত্রেই জেলার ধার ধারে না উপজেলার নেতারা, তারাই রাজা। কিছু কিছু ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও তাদের লোকজন তো মূর্তিমান আতংক স্ব স্ব এলাকার মানুষের কাছে।
অনেক যায়গায় মন্ত্রী এমপিদের অপকর্মের কথা খবরের কাগজে আসে টিভির সংবাদ হয়। এই শহরে ও জেলায় কোন সংবাদ কর্মীর ও সাহস নেই এই সকল নেতাদের প্রশংসা ছাড়া নিন্দা করার। জিন্দাবাদ ছাড়া মুর্দা বাদ দেওয়ার সাহস কারো নেই। কয়দিন আগে যমুনা টিভির টিম ৩৬০ ডিগ্রির উপর সন্ত্রাসী হামলার অভিযোগ পাওয়া যায়। এক নেতার পিএস কতৃক। নিউজ আসে যমুনা টিভির অনলাইন সংস্করণে। পরবর্তীতে আপোষ রফায় ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরে যায় যমুনা টিভি, চেপে যায় সবকিছু। এই শহরের অধিকাংশ সাংবাদিক ময়লায় নাক টিপে ঘর হতে বের হয়ে জুতা হাতে নিয়ে হেটে এসে নেতার দালালী করে। ছোট্ট এই কক্সবাজার শহরে চব্বিশটির মতো দৈনিক সংবাদ পত্র প্রকাশিত হয়। জাতীয় পত্রিকার গুলোর শ্রেষ্ঠ সাংবাদিকেরও অভাব নেই এই শহরে।যদিও সাংবাদিকতার চেয়ে পুলিশ আমলা আর নেতাদের দালালীতেই ব্যস্ততা দেখা যায় বেশি। খুব কম সত্যই প্রকাশিত হয় জনগণের স্বার্থে।
পঁচিশ জন নাকি ভিআইপি ইয়াবা কারবারি আছে কক্সবাজার জেলায়। নাম প্রকাশ করার কথা প্রশাসনের। মনে হয় একটা আপোষ হয়ে গেছে নাম গুলো আর প্রকাশিত হচ্ছে না।
দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীতে অবৈধ অস্ত্র কিছু কমলেও চকরিয়া পেকুয়া এখন অবৈধ অস্ত্রের অভয়ারণ্যে পরিনত হয়েছে।প্রায় প্রতিটি চিংড়ি ঘের ও লবন মাঠ হতে চাঁদা দিতে হয় নির্দিষ্ট হারে। না হলে নেমে আসে নির্যাতন লুট হয় লবন ও চিংড়ি। বেশ কয়েকজন জনপ্রতিনিধির হাতেই রয়েছে শত শত অবৈধ দেশি-বিদেশি অস্ত্র। তা নিয়ে প্রকাশ্যেই চলে অস্ত্রের মহড়া। কেউ প্রতিবাদ করলে নেমে আসে নির্যাতন। উল্টো অবৈধ অস্ত্র ও ইয়াবা দিয়ে পুলিশে চালান দেওয়ার ঘটনাও ঘটছে।
ভালো কাজ করে জনগণের মন জয় করে নেতা হওয়ার খায়েশ কারো নেই। অবৈধ টাকায় অস্ত্র ও অর্থের জোরে টিকে থাকেতে চায় নেতারা। টাকা দিয়ে নাকি কেনা যায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া বাকি সবাইকে। টাকায় নাকি মিলে তাদের পক্ষে সব ডিপার্টমেন্টের রিপোট, নেতাদের সুপারিশ। তাইতো সাধারণ জনগণ আজ উপেক্ষিত, উপেক্ষিত দলের দূর্দিনের নেতা কর্মীরা, উপেক্ষিত জেলার স্বার্থ।
-লেখক: প্রধান সম্পাদক, দৈনিক দৈনন্দিন ও বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ।
পাঠকের মতামত